
আমেরিকার আসন্ন নির্বাচনে ক্ষমতা দখল করতে পারেন কমলা হ্যারিস। হোয়াইট হাউসের দৌড় থেকে জো বাইডেনের সরে দাঁড়ানোর ফলে আচমকা বদলে গেছে মার্কিন নির্বাচনী রাজনীতির হিসাব-নিকাশ।
ট্রাম্পের যে একপেশে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, ডেমোক্রেটিক পার্টির দলীয় প্রার্থী হিসেবে কমলা হ্যারিস এগিয়ে আসায় সেটা এখন দিবা স্বপ্ন। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, বাইডেন মাঠে থাকলেই আখেরে লাভের মুখ দেখতেন ট্রাম্প। অভিবাসীদের প্রতি মনোভাব, বিচার ব্যবস্থার সংস্কার, পরিবেশ সংকট, ইউক্রেন, গাজা ইত্যাদি প্রশ্নে ডেমোক্রেটদের মাঝে রয়েছে নানারকম মতপার্থক্য। কমলার ব্যাপারে অনেকের কিছুটা উদ্বেগ বা অনাস্থা দেখা গেছে। কিন্তু বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, দলের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা বারাক ওবামা ও তার স্ত্রী মিশেল সহ অন্যান্য ডেমোক্রেট ডেলিগেটদের সমর্থনের পর অবস্থা এখন অনেকটাই কমলার অনুকূলে।
প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কে নড়বড়ে বাইডেনের পক্ষে ট্রাম্পকে ঠেকানো অসম্ভব মনে হচ্ছিল। ১৩ ই জুলাই পেনসিলভেনিয়া রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারে গুলি বর্ষণের শিকার হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখন তার প্রতি বিপুল মাত্রায় তৈরি হয় সিমপ্যাথি ভোট কিংবা নিরঙ্কুশ সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু তুলনামূলক যোগ্য প্রার্থী হিসেবে কমলা হ্যারিসের মাঠে নামায় বদলে যাচ্ছে হাওয়া। প্রায় ২,০০০ ডেমোক্রেটিক ডেলিগেট কমলার প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন। নির্বাচনী দৌড়ে নেমেই দলকে ঐক্যবদ্ধ করছেন তিনি। তার নাম প্রস্তাবের প্রথম একদিনে দলীয় সমর্থকদের কাছ থেকে তোলা গেছে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার চাঁদা। ধনী দাতাদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে আরো ১৫০ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি।
৮১ বছরের বৃদ্ধ জো বাইডেন নির্বাচনী লড়াইয়ে যতদিন ছিলেন, ট্রাম্পকে সামলাতে হিমশিম খেয়েছেন। বার্ধক্যের ইস্যুতে বারবার তাকে আক্রমণ করে গেছেন ট্রাম্প। বাইডেন সরে দাঁড়ানোতে উল্টে গেছে পাশার দান। ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্পই এখন আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়স্ক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী। সেই তুলনায় আমেরিকান ভোটারদের কাছে ৫৯ বছর বয়সী কমলা অনেক বেশি আকর্ষণীয়।
ইসরাইল প্রশ্নে কমলার অবস্থান তাকে সাহায্য করবে জয় পেতে। যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি ইসরাইল বিরোধিতা করে নির্বাচনী রাজনীতি করা অসম্ভব, কারণ আমেরিকায় অনেক বেশি ক্ষমতার অধিকারী ইসরাইল লবি। তাই সরাসরি বিরোধিতায় না গিয়ে বাইডেনের নীতির সাথে ভিন্নতা দেখিয়েছেন কমলা। ইসরাইলের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণের বদলে ফিলিস্তিনিদের উপর অব্যাহত গণহত্যার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ট্রাম্পের রয়েছে একটি অতি অনুগত সমর্থক বাহিনী। দেশটির মোট ভোটারের ৪০ শতাংশ তার পক্ষে থাকলেও অধিকাংশ মানুষই তাকে চান না। এই ঘৃণা ও বিরাগের মনোভাবকে অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগাতে পারলে অনেকটাই এগিয়ে যাবেন কমলা। আসন্ন নির্বাচনে যে প্রার্থী এগিয়ে থাকুক, আশা করা যায় দেখার মত হবে ট্রাম্প বনাম কমলার লড়াই।